শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০২২

ইতিহাসের সন্ধানে আজ বর্ধমানের "সাঁইবাড়ি" তে



সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড

আজ ৪ঠা মার্চ 2022, ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি বর্ধমানের বিখ্যাত সাঁইবাড়িতে। জায়গাটি কার্জন গেট এর কাছেই। বাড়ি বলতে আগুনে পোড়া ভাঙ্গা বাড়ি, বাড়ির সামনে প্রতাপেশ্বর শিব মন্দির যেটা বর্তমানে সংস্কার হয়ে আরও বড় হয়েছে। বাড়ির বাকি জায়গা শরিকরা বিক্রি করে দিয়েছেন। হাতবদল হয়ে তা চলে গেছে প্রোমোটারদের হাতে। সেই জায়গায় গড়ে উঠেছে বহুতল বিল্ডিং। আসুন জেনে নেওয়া যাক কি এই সাঁইবাড়ির ইতিহাস?


সাঁইবাড়ি হত্যাকাণ্ড পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম একটি কলঙ্কিত ঘটনা। আজও পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্বের সঙ্কটে ভোগা বামপন্থীদের কাছে এটি বিব্রতকর ঘটনা। এই ঘটনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শোকাহতদের স্বান্তনা জানাতে বর্ধমানে ছুটে এসেছিলেন।



বিরোধী-দল সমর্থনের দায়ে ১৯৭০ সালে সাঁইপরিবারের ৩ ভাই ও তাদের গৃহশিক্ষককে সিপিআই(এম)-এর সদস্যবৃন্দদের হাতে নিজগৃহে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়।



৫২ বছর(১৭ ই মার্চ,১৯৭০) আগে ঘটা সাঁইবাড়ি হত্যাকান্ড-কে আজও ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। 




ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির দৃঢ় সমর্থক হিসেবে সাঁইপরিবারের ৩ ভাইয়েরা সুপরিচিত ছিলো। ৭০ এর দশকে কংগ্রেস-বামদলের সম্মিলিত জোট ইউনাইটেড ফ্রন্টের ভাঙনের প্রাক্কালে সাঁইপরিবারের ভাইদের দল-বদলের জন্য সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হতে থাকে। কিন্তু দল-বদলের পরিবর্তে উল্টো রাজনৈতিক বাধা সৃষ্টি করার প্রতিশোধে ১৯৭০ সালের ১৭ই মার্চ সিপিআই(এম) সমর্থিত কিছু উন্মত্ত দলবদ্ধ লোক সাঁইপরিবারের ঘরে ঢুকে সবাইকে অন্যায়ভাবে নিপীড়ন করতে আরম্ভ করে।





ঘটনার দিন সাঁই-পরিবারের মেজো ভাই প্রণব সাঁইকে সকালের জলখাবার খাওয়ারত অবস্থাতেই পেছন থেকে আক্রমণ করে হত্যা করা হয়। সাঁই-পরিবারের ছোট ভাই মলয় সাঁই প্রাণে বাঁচার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রতিবেশীদের ঘরে আশ্রয় নিতে চাইলে, তাকে ধরে এনে সিপিআই(এম) সমর্থিত লোকরা হত্যা করে।



ছেলেদের মারার সময় বাধা দিতে গেলে সাঁইভাইদের মা মৃগনয়না দেবীকেও মাথায় আঘাত করা হয়। পরে আক্রমণকারীদের দু’জন প্রণব-মলয় ভার্তৃদ্বয়-কে হত্যার পর তাদের রক্ত দিয়ে ভাত মিশিয়ে তাদের মা মৃগনয়না দেবীকে সেই রক্তমাখা ভাত খেতে বাধ্য করে।

সাঁই-পরিবারের বড়ভাই নবকুমার সাঁইও এই ঘটনা থেকে নিস্তার পান নি।পরবর্তী বছরে তাকেও একই পরিণতি বরণ করতে হয়। হত্যার পূর্বে সিপিআই(এম) ক্যাডার-রা অ্যাসিড দিয়ে চোখ ঝলসানোর পর তার চোখ উপড়ে ফেলে।


পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছিল সিপিআই(এম) ক্যাডাররা, কারণ পরিবারটির সমর্থন ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি এবং ভুক্তভোগীরা সিপিআই(এম)-এর প্রতি আনুগত্য পরিবর্তন করতে অস্বীকার করেছিল।



সেদিনকার ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাঁইবাড়ির বড়ছেলে নবকুমার সাঁইয়ের স্ত্রী বর্তমানে ৭৪ বছর বয়সী রেখারাণী দেবী ভারতের প্রথমসারির দৈনিক দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন-


"আমার দেবর প্রণব আর মলয় এবং আমার মেয়েদের গৃহশিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ রায়, যিনি সেদিন বাড়িতে পড়াতে এসেছিলেন, এই ৩ জনকে নিজ চোখের সামনেই খুন হতে দেখেছি। আমার বয়স ছিলো তখন ২৬। সকাল ৭ঃ৩০ টায় সিপিআই(এম)-এর লোকেরা আক্রমণ চালাতে শুরু করে। আক্রমণের প্রথম দিকে তারা পাথর ছুঁড়ে মারলেও, পরে পুরো বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।প্রাণপণে চেষ্টা করছিলাম আমার শ্বাশুড়ি মৃগনয়না দেবীকে আগলে রাখতে। কিন্তু তিনি তাঁর ছেলেদের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গেলে আক্রমণকারীরা তার মাথায় আঘাত করে বসে। পরে আক্রমণকারীদের দু’জন ভাতের সাথে তার ছেলেদের রক্ত মিশিয়ে তা খেতে বাধ্য করে। ঘটনার পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বাঁচানো হয়।"


এই ঘটনার পর থেকে সাঁই-ভাইদের মা মৃগনয়না দেবী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, যা থেকে মৃত্যুর আগেও তিনি সেড়ে উঠতে পারেন নি। সাঁই-ভাইদের মৃত্যুর এক দশক পর তাদের মা পরলোক গমন করেন। 



যেসব কমিউনিস্ট-ক্যাডার-রা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো, তাদের অনেকেই বামফ্রন্ট সরকারের আমলে মন্ত্রী হয়েছেন কিংবা পার্টির উঁচু পদে আসীন হয়েছিলেন। জড়িতদের কাউকেই আইনের আওয়াতায় আনা হয় নি।কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ বিনয়কৃষ্ণ কোনার, অনীল বসু, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী নিরুপম সেন এবং অমল হালদার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তৃণমূল সরকার ২০১১ সালে কমিশন গঠন করে এই ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে চাইলে সিপিআই(এম)-এর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তৃণমূল সরকারের এই প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে অ্যাখ্যা দেন।


তথ্যসূত্র:

Wikipedia  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

SWAMI VIVEKANANDA MEANS CUM MERIT SCHOLARSHIP

Swami Vivekananda means cum merit scholarship  SVMCM With a view to assisting the meritorious students belonging to economically backward fa...